রাজধানীতে চলা বেশির ভাগ লোকাল বাসেই ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি যাত্রী বহন করতে দেখা যাচ্ছে এবং সরকারি নির্দেশনা সত্ত্বেও এসব বাসে জীবাণুনাশকের তেমন কোনো সরঞ্জাম নেই।
সরকার করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গত ৩১ মে ৫০ শতাংশ কম যাত্রী বহনের শর্তে বাস ও মিনিবাসের ভাড়া পুনর্নির্ধারণ করে ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি করে। পরে ১ সেপ্টেম্বর থেকে পূর্বের ভাড়া কার্যকর এবং বাসগুলোকে তাদের ধারণ ক্ষমতার ১০০ শতাংশ যাত্রী বহন করার অনুমতি দেয়া হয়। তবে সেক্ষেত্রে বাস কর্তৃপক্ষকে যাত্রীদের জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজার এবং হাত ধোয়ার প্রয়োজনীয় অন্য সরঞ্জাম রাখা এবং যাত্রা বিরতির মধ্যে বাস জীবাণুমুক্ত করার কথা বলা হয়েছে সরকারি বিধিমালায়।
তবে গণপরিবহনে যাতায়াত করা যাত্রীদের সমস্যা এখন আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। আতাউর নামে মিরপুর থেকে আসা একজন যাত্রী জানান, ভাড়া নিয়ে যাত্রী ও কন্ডাক্টরের মধ্যে ঝগড়া এখন প্রায় স্বাভাবিক ঘটনা।
মুন্তাকিম রহমান নামে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘তাদের মনে করিয়ে দেয়া প্রয়োজন যে আগের ভাড়া কার্যকর হয়েছে। কিন্তু এখনও আমাদের কমপক্ষে ৫ থেকে ১০ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হচ্ছে। সাধারণত রামপুরা থেকে শাহবাগের ভাড়া ২৫ টাকা। কিন্তু ৩১ আগস্ট পর্যন্ত আমাকে ৪০ টাকা দিতে হয়েছিল এবং এখন দিতে হচ্ছে ৩০ টাকা করে।’
‘দুর্ভোগ বেড়েছে’
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) মতে, এ ধরনের সমস্যা সমাধানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের অধীনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে।
গত ২৯ আগস্ট স্বাস্থ্য নির্দেশনা মেনে মালিক ও শ্রমিকদের যানবাহন চালানোর আহ্বান জানান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তবে ধারণ ক্ষমতার বেশি যাত্রী বহন না করা এবং স্বাস্থ্যবিধির নিয়ম অনুসরণ করার মতো সরকারি নির্দেশনাগুলো বেশির ভাগ গণপরিবহন মালিক-শ্রমিকরাই মেনে চলছেন না। এমনকি মাস্কও ব্যবহার করছেন না বাসের অনেক কর্মী এবং যাত্রীরা।
বাসের একজন কন্ডাক্টর যুক্তি দিয়ে বলেন, বাসে ওঠার সময় যাত্রীরা স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে চান না এবং তাদের অনুরোধ এড়িয়ে যান। তবে বাস কর্তৃপক্ষেরই স্বাস্থ্য নির্দেশিকার দিকে মনোযোগ নেই বলে অভিযোগ যাত্রীদের।
‘ব্যক্তিগত কোনো বাহন না থাকায় যাতায়াতের জন্য ঝুঁকি নিয়ে গণপরিহনে ওঠা ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নেই। কিন্তু চালক ও কন্ডাক্টররা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন না এবং অতিরিক্ত যাত্রী বহন করেন যা করোনা সংক্রামণ বৃদ্ধির সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে,’ বলেন এক যাত্রী।
রায়হান নামে অরেকজন যাত্রী বলেন, ‘সরকার বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করলেও, এখনও রাস্তায় কম সংখ্যক বাস চলাচল করছে, বিশেষ করে দুপুরের পরে। এর ফলে যাত্রীদের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।’
গণপরিবহন কতটা নিরাপদ?
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ৩ লাখ ৩২ হাজারের বেশি করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে এবং মৃত্যু হয়েছে ৪ হাজার ৬৩৪ জনের।
গণপরিবহনে স্বাস্থ্য নির্দেশিকা, যেমন মাস্ক না পরা বা সিট জীবাণুমুক্ত না করার ফলে যে কেউই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন। তবে ঝুঁকি হ্রাস করার উপায়ও রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কথা বলার সময় বা হাঁচি-কাশি থেকে মানুষের ড্রপলেটের মাধ্যমেই মূলত ভাইরাস বেশি ছড়ায়। অর্থাৎ গণপরিবহন এবং অন্য কোথাও সংক্রমণের বিস্তার হ্রাস করার সর্বোত্তম উপায় হলো মাস্ক পরা এবং অন্যের থেকে কমপক্ষে ৬ ফুট দূরে থাকা। কিন্তু বাসগুলোতে সেই নিয়ম মানা হচ্ছে না। আর বেশির ভাগ সময়ই ধারণ ক্ষমতার বেশি যাত্রী বহন করা হচ্ছে। যার ফলে, বাসে পাশাপাশি বসে থাকা যাত্রীদের মাঝে নির্দিষ্ট দূরত্ব রক্ষা হচ্ছে না এবং এর ওপরে অনেকেই মাস্ক ব্যবহার করছেন না।
সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে নন-পিক আওয়ারে ভ্রমণ করা, স্টেশন এবং স্টপেজগুলোতে ভিড় এড়িয়ে চলা এবং যখন সম্ভব হবে তখন গণপরিবহনে এক সারি আসন বাদ দিয়ে বসার পরামর্শ দিয়েছে ইউএস সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)।
করোনাভাইরাস এবং এটি কীভাবে ছড়ায় সে সম্পর্কে এখনও অনেক কিছুই অজানা থাকলেও বিশেষজ্ঞরা জানান, পরিবহন ব্যবস্থার করণে এখনও বড় ধরনের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়নি।